আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে সাংবাদিকতা কত প্রকার ও কি কি? তাহলে আমি বলবো দুই প্রকার, তাহলো ঢাকার সাংবাদিক ও মফস্বল সাংবাদিক। উত্তরটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত। কারণ উত্তরটার মধ্যে অনেক ক্ষোভ ও দুঃখ জড়িয়ে আছে।
সাংবাদিকতা যদি দুই প্রকার হয়ে থাকে তাহলে ঢাকার সাংবাদিক ও মফস্বল সাংবাদিকদের মধ্যে পার্থক্য কি এমন একটা প্রশ্ন চলে আসে। আমার মতে ঢাকা ও মফস্বলের সাংবাদিকদের মধ্যে পার্থক্য বহু।
কাজের ক্ষেত্রে ঢাকার সাংবাদিকদের যেসব সুযোগ সুবিধা থাকে তার ছিটে ফোটাও মফস্বল সাংবাদিকদের থাকে না। যেমন ঢাকার সাংবাদিকদের জন্য রাজনীতি, অর্থনীতি, বিনোদন, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন বিট (বিভাগ) ভাগ করা থাকে। যিনি যে বিভাগের তিনি শুধু সেই বিভাগেরই নিউজ লিখবেন। এমনকি বিজ্ঞাপনের জন্যও আলাদা মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ রয়েছে। অথচ মফস্বলের সাংবাদিকদের জন্য কোন বিট ভাগ করা নেই। জেলা-উপজেলা অথবা পুরো বিভাগের সকল ধরণের নিউজ তাদের লিখতে হয়। বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করতে হয়, পত্রিকার সার্কুলেশন দেখতে হয়। ঢাকার সাংবাদিকদের মত গাড়িসহ ক্যামেরাম্যান পান না তারা, নিজেই সাংবাদিক নিজেই ক্যামেরাম্যান আবার নিজেই গাড়িচালক।
এতো গেলো কাজকর্ম, এখন আসি সুযোগ সুবিধার বিষয়ে। খেয়াল করে দেখবেন অনেক দোকানে একটা নোটিশ দেখা যায়, ‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না’। আসলে মফস্বল সাংবাদিকদেরও অবস্থা হয়েছে তেমন। বেশিরভাগ গণমাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা যখন বেতন-ভাতার বিষয়টি তোলেন তখন ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তেমনি একটা সুর ভেসে আসে ‘বেতন চাহিয়া লজ্জা পাবেন না’। তবুও থেমে নেই মফস্বলের সাংবাদিকরা। আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের দায়িত্ব পালনে।
সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসক, নার্সসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর জন্য বিমা ও প্রণোদনার কথা জানালেও ঝুঁকির মধ্যে তথ্যসেবা দিয়ে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের কেবল ধন্যবাদ দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে রাষ্ট্রের দেওয়া প্রণোদনা না পাওয়ায় সাংবাদিক মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ ঝাড়ছে। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে আন্দোলনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। আমার প্রত্যাশা হয়তো এই আন্দোলনে সাংবাদিক মহল বিজয়ী হবেন এবং প্রণোদনাও পাবেন। কিন্তু শঙ্কার জায়গা হলো যদি প্রণোদনা পেয়েও থাকেন তাহলে মফস্বলের সাংবাদিকরাও কি এর আওতায় আসবে?
দলকানা অনেকেই হয়তো আমার এই শঙ্কার কথা শুনে বলে উঠবেন কেন প্রণোদনার আওতায় আসবে না মফস্বল সাংবাদিকরা? সেইসব দলকানাদের কাছে আমার প্রশ্ন সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশের প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি দৈনিক পত্রিকা অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করে থাকে। এই ২৫/৩০টা পত্রিকার কতজন মফস্বল সাংবাদিক ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন পান? খোঁজ নিয়ে দেখবেন বেতনতো দূরের কথা, বিভিন্ন অফিসে ঘুরে যে বিজ্ঞাপন তারা সংগ্রহ করেন তার কমিশনটাও ঠিকঠাক পান না। খোঁজ নিয়েছেন কখনো, কেমন আছে মফস্বলের সাংবাদিকরা?
সকল সুযোগ সুবিধার বেলায় এই মফস্বল সাংবাদিকরা সব থেকে বেশি বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন। প্রতিনিয়ত মফস্বলের সাংবাদিকরা নির্যতনের শিকার হন, কিন্তু সঠিক বিচার পান না। খেয়ে না খেয়ে মানুষকে তথ্য সেবা দিয়ে আসলেও তাদের তথ্য নেয়ার মত সময় কারো থাকে না। তাই সাংবাদিক নেতাদের কাছে বিনিত অনুরোধ রাষ্ট্র ও অন্য পেশার মানুষরা এদের কষ্ট না বুঝলেও আপনারা নিশ্চয়ই তাদের কষ্ট বুঝবেন। শুধু প্রণোদনাই নয় মফস্বল সাংবাদিকদের সকল সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।
মুক্তিযুদ্ধে যেমন বহু সাংবাদিকের অবদান রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার পরেও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুখে-দুঃখে এই পেশার মানুষগুলোর অনেক অবদান রয়েছে।
তাই বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার কাছে অনুরোধ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দেশের গরীব মানুষদের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন, আপনিও তাই করে যাচ্ছেন। আপনি হয়তো জানেন না এই সাংবাদিকতা পেশায় কত মানুষ আজ অসহায়। মাসের পর মাস বেতন বকেয়া, কথায় কথায় চাকরি হারিয়ে বহু সাংবাদিক এখন দিশেহারা। তাই আশা করছি আপনি আমাদের দিকে নজর দেবেন, করোনাভাইরাসের এই মাহামারিতে সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াবেন। মা যেমন সন্তান বিপদে আগলে রাখে তেমনি করে।
লেখক- এম সুজন আকন, সহ-সম্পাদক, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment