ঊনিশে "পেঁয়াজ কাঁদিয়েছে, লবণ ভাসিয়েছে" এই হলো ইতিহাস - চ্যানেল দূর্জয়। - চ্যানেল দূর্জয়

Most Popular

asdsaa.png চ্যানেল দূর্জয়-নির্ভীক যে কণ্ঠস্বর

সদ্যপ্রাপ্ত

Post Top Ad

asdsaa.png

ঊনিশে "পেঁয়াজ কাঁদিয়েছে, লবণ ভাসিয়েছে" এই হলো ইতিহাস - চ্যানেল দূর্জয়।




ওমর আল হাসান।।  আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকী ২০১৯ সালের। তারপরই বছরকে বিদায় দিয়ে বরণ করে করা হবে ২০২০ বছরকে। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার সাক্ষী সালটি। ভালো-খারাপ মিলিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে বছরটা। এ বছরের ঘটনাগুলোর মধ্যে পেঁয়াজ-লবণ বেশ আলোচনায় ছিল। অর্থাৎ বছরের শেষদিকে এসে দেশের জনগণকে পেঁয়াজ কাঁদিয়েছে আর লবণ ভাসিয়েছে।
 
বাজারের এই দুই নিত্যপণ্য ঘাম ঝরিয়েছে প্রায় প্রতিটি মানুষের। যা নিয়ে কয়েক মাস প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আমজনতা এমনকি সংসদের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়েছে এই দুই পণ্য। সংবাদমাধ্যমের প্রধান খবর হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, কলামিস্টদের পেরা পেরা লেখার বিষয়বস্তু হয়েছে এই পেঁয়াজ-লবণ।

পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনা শুরু হয় ঈদুল আজহার দুই-তিন সপ্তাহ আগে (জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ)। আগে পেঁয়াজের দর ২৫-৩০ টাকা থাকলেও সেসময় হঠাৎ করেই ৪০ থেকে ৫০ টাকায় উঠে যায়। এরপর থেকে বাড়তি দামেই পেঁয়াজ বিক্রি চলতে থাকে। এর মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর এক লাফে পেঁয়াজের দাম দুই গুণ হয়ে যায়। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। আর হু হু করে লাগামহীন হয় দাম।
সংকট মোকাবিলায় সরকার মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে। যার তিন ভাগের এক ভাগই পচা। এরপর একেক করে মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তান ও চীন থেকে শুরু হয় আমদানি। তবুও দাম কমার পরিবর্তে দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকে। জুন মাসে ৬৫ টাকা, জুলাইয়ে ৭০ টাকা, আগস্টে ৮০ টাকা, সেপ্টেম্বরে ১০০ টাকা, অক্টোবরে ১২০ টাকা আর নভেম্বরে দিনে দিনে বেড়ে ২৮০ টাকা পর্যন্ত দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হতে দেখা যায়।

এরমধ্যে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাজারে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়েও কমাতে পারেনি অসাধুদের দৌরাত্ম্য। খুচরা-পাইকারি বাজারের হাতবদলে আর অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে চলতেই থাকে নানা কাহিনী।
যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির আশ্বাস দেন শিগগিরই পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। আশ্বাস দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত বলেন নতুন পেঁয়াজ না উঠলে দাম কমার কোনো সুযোগ নেই।
পেঁয়াজ বাজারের অস্থিরতা কাটাতে শাদ এন্টারপ্রাইজ- এস আলম গ্রুপ আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানির তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেয়। আকাশপথে পাকিস্তানের করাচি বিমানবন্দর থেকে পেঁয়াজের প্রথম চালান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় ২৯ নভেম্বর। আকাশপথে চারটি উড়োজাহাজে পেঁয়াজের চালান আনার সময়সূচি ঠিক হয়, চলেও আসে দেশে। সেই খবর শোনামাত্রই কেজিতে ৫০ টাকা কমে দাম। আবারও লাগামহীন হয়।

দেশের বাজারে যখন পেঁয়াজ সংকট চরম তখন এক শ্রেণির মানুষ এটা নিয়ে হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠে। অনেকেই ডিমের মতো পেঁয়াজের হালি বিক্রির ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। কেউ কেউ পেঁয়াজের গহনা তৈরি করে উপহার দেন প্রিয়জনকে। যা ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে। এছাড়াও বিয়ের অনুষ্ঠানে নবদম্পতিকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় পেঁয়াজ। এ ঘটনা ঘটে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও চুয়াডাঙ্গা জেলায়। তারপরই অপরিপক্ক পেঁয়াজ বাজারে ওঠে যা ১০০-১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এখন নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমেছে তবুও ১০০ এর মধ্যেই আছে দাম। পেঁয়াজ যখন এভাবে কাঁদিয়েছে মানুষে ঠিক তখনই লবণের দর বাড়ার গুজবে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

গত ১৮ নভেম্বর হঠাৎ সন্ধ্যা থেকে সিলেট মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে। মুহূর্তেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন ভোগ্যপণ্যের দোকানে। বাড়তি চাপে নিমিষেই ফুরিয়ে যায় বিভিন্ন দোকানের লবণ। তবে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় লবণের দাম কাঁদাতে না পারলেও স্রোতের মতো ভাসিয়ে নিয়ে গেছে দোকানে। অনেকেই ৩ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত কিনে রাখেন। রাজধানীসহ দেশের কোথাও কোথাও ৩৫ টাকার প্রতি কেজি লবণ ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। টানা এক সপ্তাহ ধরে চলে লবণ কেনা। তবে গুজব বিষয়ে বেশ সতর্ক ছিল ব্যবসায়ীরা। গুজব বুঝতে পেরে খুচরা লবণ ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের এক কেজির বেশি লবণ দেওয়া বন্ধ করে দেন। তাদের দাবি, বেশি লবণ নিলে বাজারে সংকট পড়বে, এ অজুহাতে দাম বাড়তে পারে।

লবণসংক্রান্ত বিষয়ে তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) প্রধান কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম পর্যন্ত খোলা হয়। কেউ লবণের দাম বেশি নিলে সেখানে যোগাযোগ করার নির্দেশনা দেওয় হয়।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩ দশমিক ৩০ লাখ টন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ সংগ্রহকালীন ও সংরক্ষণকালীন সময়ে নষ্ট হয়। তারপরও অন্ততঃ ১৬ দশমিক ৩০ লাখ টন পেঁয়াজ দেশের কৃষকরাই উৎপাদন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ১০ দশমিক ৯১ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ২ দশমিক ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। সব মিলিয়ে পেঁয়াজের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৩৪ লাখ টন। সরকারি তথ্য বলছে, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। এসব তথ্য ঠিক হলে দেশে তো চাহিদার থেকে অনেক বেশি পেঁয়াজ থাকার কথা। তবু  এই বছরে পেঁয়াজ আর লবণ নিয়ে যে কাণ্ড ঘটে গেলো তা মনে হয় কালের সাক্ষী হয়েই থাকবে। কারণ পেঁয়াজের এত দাম উঠতে গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি। আর পেঁয়াজের এই ঝাঁঝের কথা মাথায় নিয়ে লবণ নিয়েও জনগণ গুজবের সাগরে গা ভাসিয়ে স্রোতের মত দোকানমুখী হয়েছে।

No comments:

Post Top Ad

asdsaa.png